সুন্দর দাঁতের জন্য করণীয়!
সবারই কাম্য একটি সুন্দর
মুখ। এই সুন্দর মুখের জন্য আমাদের অনেক পরিকল্পনা। সুন্দর চেহারা বলতে
সুস্থ সুন্দর চোখ, নাক, ঠোঁট এবং সেই সাথে উজ্জ্বল মজবুত দাঁতকে বুঝায়।
সুন্দর হাসি ও আকর্ষণীয় ব্যাক্তিত্বের জন্য উজ্জ্বল, রোগমুক্ত দাঁতের
গুরুত্ব অপরিসীম।
সঠিক সময়ে যত্নের অভাবে দাঁতে আক্রমণ করে
রোগ-জীবানু ও বিভিন্ন রকমের অসুখ। তখন অকালে দাঁত ও দাঁতের মাড়ি হয়ে ওঠে
কালচে, ভঙ্গুর ও হলদে রংয়ের। যা খুবই বিশ্রী দেখায়।
সামান্য সচেতনতা ও যত্ন আমাদেরকে বাঁচাবে
দাঁতের বিভিন্ন সমস্যা থেকে। তই ছোট বেলা থেকেই দাঁতের যত্ন নিন। আপনার
চেহারা, হাসি ও ব্যক্তিত্বকে করে তুলুন আরো বেশি আকর্ষণীয়।
পরিচর্যাসমূহ:
১। প্রতিদিন সকাল ও রাতে (ঘুমানোর আগে) ভালোভাবে দাঁত ব্রাশ করা উচিত।
২। খাবারে চর্বি, পনির বা ক্রিম থাকলে
অবশ্যই ব্রাশ করে কয়েকবার কুলি করা উচত। কারণ চর্বি ও শর্করাযুক্ত খাবার
দাঁতের ফাঁকে জমে দাঁতকে দ্রুত ক্ষয় করে। দাঁতের উপরিভাগে খাদ্যকণা মিশ্রিত
তেল জমে দাঁতের মসৃণতা নষ্ট করে।
৩। খাবার পানি ফুটিয়ে পান করা উচিত। ফুটানো সম্ভব না-হলে নলকূপের পানি সংগ্রহ করুন।
৪। একটা বস্তুকে মুক্ত বাতাসে যেভাবে
ব্রাশ করা সম্ভব সেভাবে ব্রাশ দিয়ে জিকজ্যাক পদ্ধতিতে (উপরে, নিচে, ভেতরে,
বাইরে) পরিষ্কার করতে হবে।
৫। ব্রাশের সমান্তরাল স্টিকের পরিবর্তে বাঁকা হওয়া দরকার। এতের মুখের ভেতরের দাঁতগুলো ভালোভাবে পরিষ্কার হবে।
৬। বাঁকা দাঁতে ময়লা জমে বেশি, তাই দীর্ঘ
সময় ধরে ব্রাশ করা উচিত। অনেক সময় একই স্থান থেকে দুটো দাঁত গজায়।
অপারেশনের মাধ্যমে একটা দাঁত তুলে ফেলা যায় বা সমান্তরালহীন দাঁতগুলোকে
সারিবদ্ধতায় আনা যায়। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
৭। দাঁতের ফাঁকের ময়লাগুলো দীর্ঘদিন ধরে
জমে ক্ষুদ্র পাথর কণায় পরিণত হয়। তখন দাঁতের উপরিভাগে কালো দাগ পড়ে। এটা
ভীষণ দৃষ্টিকটু দেখায়। এ জন্য প্রতি ছয় মাস পরপর দাঁতের স্কেলিং করানো
উচিত। বয়স ৪০-এর উর্ধ্বে হলে এক বছর পরপর করাতে হবে। নতুবা স্কেলিংয়ে
ব্যবহৃত ইলেকট্রিক যন্ত্রের ফলে দাঁতের গোড়া দূর্বল হয়ে যাবে। কারণ বয়সের
সঙ্গে সঙ্গে দাঁতের মাড়িও ক্ষয় হতে থাকে।
৮। প্রতি পাঁচ মাস পর ব্রাশ পরিবর্তন
করুন। সম্ভব হলে একই সঙ্গে সমান্তরাল ও বাঁকা দন্ডের ব্রাশ ব্যবহার করুন।
প্রতি মাসে দুটো ব্রাশকে এক ফোঁটা স্যাভলন বা ডেটল মিশ্রিত এক বাটি কুসুম
গরম পানিতে ২০ মিনিট ডুবিয়ে রাখুন। ২০ মিনিট পরে ব্রাশ দুটোকে স্বাভাবিক
পানিতে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন, যেন ডেটলের গন্ধ না থাকে। প্রয়োজনে টুথপিক
দিয়ে ব্রাশের গোড়া পরিষ্কার করুন। ধুলোবালি, পোকা-মাকড় থেকে রক্ষার জন্য
ঢাকনাযুক্ত ব্রাশ ব্যবহার করুন।
৯। অনেকের সারিবদ্ধ দাঁতের মধ্যে যেকোনো
একটি বা দুটি দাঁত থাকে ত্রুটিযুক্ত হলুদ। এ জন্য কোনো প্রসাধনীর পরিবর্তে
দ্রুত চিকিৎসের শরণাপন্ন হোন।
১০। দাঁতের ঔজ্জ্বল্য বৃদ্ধির জন্য অনেকেই
খাবার সোডা ব্যবহার করেন। পারতপক্ষ সোডা পরিহার করুন। সোডায় ক্ষার থাকে।
সেটা দাঁতের কোমল মাড়ির জন্য ক্ষতিকর। অনেক সময় দাঁতের অতি সংবেদনশীল মাড়ি
পুড়ে লাল হয়ে যায়। স্বাভাবিক দৃষ্টিতে যা দেখতে জমাটবদ্ধ রক্তের মতো দেখায়।
১১। দাঁদের ঔজ্জ্বল্য বৃদ্ধির জন্য
মাঝেমধ্যেই মাউথ ওয়াশ দিয়ে কুলি করুন। মাউথ ওয়াশ না-থাকলে হাফ চা চামচ
খাবার লবণ দিয়ে দাঁত ব্রাশ করুন। প্রতিদিন লেবু বা কোনো টক ফল খান।
ক্যালসিয়ামের অভাবেও দাঁতের ঔজ্জ্বল্য নষ্ট হয়। এ জন্য ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ
শাক-সবজি খান।
১২। অতিরিক্ত ঠান্ডা বা গরম পানীয় দাঁতের
জন্য ভীষণ ক্ষতিকর। দুটো পানীয় একই সঙ্গে গ্রহণ করা অনুচিত। খুব গরম চা বা
কফি পানের অন্তত ১ ঘন্টা পরে স্বাভাবিক পানি পান করুন।
১৩। অনেকেই বিভিন্ন গাছের দাঁতন ব্যবহার
করে থাকেন। এতে মনোযোগী হতে হবে যেন দাঁতনের আঁশ দাঁতের দাঁতের গোড়ায় আটকে
না থাকে। টুথপিক ব্যবহারে মাড়িতে ফুটো হলে ইনফেকশন হয়। তাই সতর্কতার সঙ্গে
টুথপিক ব্যবহার করুন।
১৪। প্রতিষ্ঠিত ব্রান্ডের টুথপেস্ট
ব্যবহার করাই ভালো। টুথপেস্টেও মাঝেমধ্যে পরিবর্তন আনুন। কয়লা, ছাই, মাটি
বা বালু দিয়ে দাঁত মাজা অনুচিত। টুথ পাউডার ব্যবহার করতে পারেন। হারবাল বা
নিম জাতীয় টুথ পাউডার ব্যবহার করুন। টুথ পাউডার মিহি হওয়ার জন্য প্রতিটি
দাঁতের ফাঁকে পৌঁছায়, যা দাঁতের পুষ্টি জোগায়। মাঝেমধ্যে আঙুল দিয়ে টুথ
পাউডার ব্যবহারে মাড়ির বিশ্রাম হয়।
১৫। গ্যাসট্রিকের সমস্যা থাকলে মুখে
দুর্গন্ধ হয়। ফলে দাঁতের হলুদাভ আবরণ আসে। নিয়মিত গ্যাসট্রিকে ঠোঁটের দুই
কোণে কালো হয়ে যায়। এ জন্য প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণ পানি পান করুন।
১৬। অ্যালকোহল ও ধূমপানে দাঁত কালো হয়ে
যায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দাঁতের মাড়িও কালো হয়ে ফুলে যায়। মাড়ির রক্তবাহী
শিরাগুলো মোটা দেখায়, যা সুন্দর হাসির জন্য হুমকিস্বরূপ। তাই অ্যালকোহল ও
ধূমপান এড়িয়ে চলুন।
১৭। অনেকের দুটো দাঁতের মাঝে ফাঁকা স্থান
বা ভাঙা দাঁত থাকে। কৃত্রিম উপায়ে চিকিৎসা সম্ভব, এ জন্য চিকিৎসকের
শরণাপন্ন হোন। প্রতি সপ্তাহে অন্তত একটা ভিটামিন-সি ট্যাবলেট খান।
১৮। পান, সুপারি, জর্দা বা গুল পরিহার
করুন। এসবে আসক্তি থাকলে খাবার পরে দাঁত ব্রাশ করে ফেলুন। পানে চুনের
পরিমাণ যত কম হয় ততই ভালো। মাত্রাতিরিক্ত চুন দাঁতের এনামেল ক্ষয় করে।
১৯। বাঁধানো দাঁত বা কৃত্রিম দাঁতের প্রতি বিশেষ যতœ নিন। প্রায়ই (চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী) সেগুলো খুলে পরিষ্কার করুন।
২০। পোস্ট মেনোপোজাল লেডি অর্থাৎ মাসিক
চিরতরে বন্ধ হয়ে গেছে এই ধরণের মহিলাদের দেহে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ‘ডি’র
ঘাটতি হয় প্রচূর পরিমাণে। এই ঘটতির জন্য এই ধরণের নারীদের দাঁতে নানান রকম
সমস্যা হয়। তাই প্রথম থেকেই দাঁতের প্রতি যতœশীল হউন।
২১। বর্তমানে উন্নত প্রযুক্তির কল্যাণে কৃত্রিম দাঁত মুখের সাথেই লাগানো থাকে। এই ধরণের দাঁতের প্রতি যত্নশীল হউন।
২২। বছরে অন্তত একবার পুরো দেহের চেক আপ
করান। এতে লুকায়িত কোন রোগ জীবাণু থাকলে ধরা পড়বে। দেহের প্রতিটি অঙ্গ
পরস্পরের উপর নির্ভরশীল। তাাই সুস্থ্য দাঁত ও সুস্থ্য দেহের জন্য পুরো দেহ
রোগমুক্ত থাকাটা ভীষণ জরুরী।
No comments:
Post a Comment